শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফের ঝুলে গেল খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

ফের ঝুলে গেল খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

স্বদেশ ডেস্ক:

– বিদেশে যেতে হলে আগে জেলে যেতে হবে : আইন মন্ত্রণালয়
– সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে গত কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা বলে তার পরিবারও আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। তাদের ধারণা ছিল, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এবার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিবে সরকার। সরকারের তরফ থেকেও ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছিল-খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য করা পরিবারের আবেদন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে গতকাল বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বাতিল করে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করতে হবে।

সরকারের এই অবস্থানকে রাজনৈতিক ‘নির্মমতা’ বলে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বেগম জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, খালেদা জিয়াকে সরকার নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়ায় এখানে আদালতের কোনো বিষয় নেই। সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারে। সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ায় বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আবারো ঝুলে গেলো। বিএনপির এটা ছিল দীর্ঘদিনের একটি দাবি। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এর আগেও একাধিকবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। এবারের মতো বিগত আবেদনগুলোও নাকচ করে দিয়েছিল সরকার।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, প্রতিবারই রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করবে দলটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, চলমান এক দফার আন্দোলনের সাথে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে। এর ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, এই আন্দোলনের সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জড়িত। জানা গেছে, চলমান এক দফার আন্দোলনে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করবে বিএনপি। এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে। আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় দলের স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বাতিল হওয়ায় বিএনপির করণীয় সম্পর্কে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা তো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে সরকার নতুন করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাতে দেখা যায়, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।

বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিলো না। বেগম জিয়া যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, সরকারের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সেটা আবার প্রমাণিত হলো।

এ দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকারের সাথে পর্দার অন্তরালে পরিবারের আলোচনার খবরকে ভিত্তিহীন বলেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকারের সাথে পর্দার আড়ালে কখনো কোনো আলোচনা হয়নি। বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ। এজন্য বারবার তার মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। একইভাবে পরিবারও আবেদন করেছে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু সরকার যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে মুক্তি দেবে না সেটা তাদের জানা ছিল।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আবেদন মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার এই আবেদন বাতিল করে গতকাল আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করতে হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এর আগে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মতামত দিয়েছেন, তাই আইনের অবস্থান এবং সেটাই সঠিক। এর আগে আমেরিকায় ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন, তাহলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আবার প্রমাণিত হয়েছে- দেশে আইনের শাসন নেই। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রতি এক ভয়ঙ্কর তামাশা করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিতে পারতেন এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারতেন।

লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫৩ দিন ধরে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর পরিবারের আবেদনে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877